মানিক হোসেন, রাজশাহী প্রতিনিধি: আজ সরস্বতী পূজা। স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিদ্যার দেবী, মা সরস্বতীর পূজা আর্চনা করছেন হিন্দুধর্মালম্বীরা। শনিবার পূজা রবিবার বিসর্জনের মধ্যে দিয়ে শেষ হবে এই পূজা। আনন্দ উল্লাসে ছোট পরিসরে পূজা মন্ডপ ও বাড়িগুলো রাঙিয়ে তুলেছেন বিদ্যার্থীরা। শুক্রবার (৪ ফেব্রুয়ারি) রাজশাহী নগরীর বেশ কিছু মন্ডপ , শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও বাড়ি ঘুরে দেখা গেছে মা স্বরসতীর আরাধনায় আলপনা আঁকার কাজ।
দেবীর মণ্ডপের সামনে, বাড়ির প্রধান দরজার সামনে আঁকা হয়েছে আলপনা। শনিবার সকাল ৭ টা থেকে পঞ্চমী তিথি সেই সাথে শুরু হবে স্বরসতী পূজা। এই তিথি রবিবার সকাল ৯ টা পর্যন্ত বিদ্যমান থাকবে। প্রায় ৫০০ এর বেশি জায়গায় এবং বাড়িতে বাড়িতে এই পূজা আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে দিয়ে পালিত হবে।
পৃথিবী সরকার পিয়াস নামের একজন বলেন, আমি এই পূজার মাধ্যমে মানুষের মত মানুষ হওয়ার শিক্ষা ও জ্ঞানের বিকাশ দরকার এজন্য তিনি যেন আমাকে সেগুলো দান করেন এই প্রার্থনা করি। বিদ্যাদাতা মা স্বরসতীকে বরণ করে নিতে আমরা রং তুলির ছোঁয়ায় ডিজাইন এঁকে নিজের মনের শিল্পসত্ত্বাকে জাগিয়ে তুলি। দেবী বন্দনায় এক অন্যমাত্রা যোগ করে এই আলপনা। মনে জাগিয়ে তোলে আগ্রহ। মা সরস্বতী সম্পর্কে সবার জানা দরকার ।
মা সরস্বতীকে নদীরূপে, বিদ্যার অধিষ্ঠাত্রী দেবীরূপে কল্পনা করা হয়। তিনি সঙ্গীতেরও দেবী। বেদ, উপনিষদ, পুরাণ, তন্ত্র, সংহিতা, রামায়ণ, মহাভারত, সাহিত্য এবং ইতিহাসে দেবী সরস্বতীর বিভিন্ন কাহিনি এবং বিভিন্ন রূপের কথা জানতে পারি। শুনেছি পুরাণে, সরস্বতী নদীর মহিমার সঙ্গে নারীজাতির একটি শুচিতার সম্পর্ক ছিল। স্বর্গের সুন্দরী, অপ্সরা, নর্তকীদের মধ্যে সরস্বতীর প্রভাবও ছিল যথেষ্ট। বিশ্বামিত্রের অভিশাপে সরস্বতী রক্ত নদীতে পরিণত হয়েছিলেন পরে মহাদেবের বরে তিনি নারী শ্রেষ্ঠা রূপে সম্মানিত হলেন। আমরা বিদ্যার দেবী হিসেবে সরস্বতীর আরাধনা করি। মা সরস্বতীর নানা রকম মূর্তি আছে ।
সেখানে দেখা যায় সচরাচর তিনি চতুর্ভুজা এবং তাঁর চার হাতে বই, মালা, বীণা এবং জলপাত্র । মা সরস্বতীর চারটি হাতকে চার বেদের প্রতীক বলে ধরে নেওয়া হয়। তবে শাস্ত্রমতে চতুর্ভুজের অন্য অর্থ আছে। তাঁর হাতের বই হল গদ্যের প্রতীক, মালা হল কবিতার, বীণা হল সঙ্গীতের, আর জলপাত্র হল পবিত্র চিন্তার।
কুমারপাড়ার বড়কুঠি থেকে আনন্দ কুমার নামে এক ভক্ত বলেন, মা সরস্বতীর বাহন রাজহাঁস। বিদ্যার সাথে অবিদ্যার এক সম্পর্কের প্রতীক এই রাজহাঁস। কারণ, হাঁস জলমেশানো দুধ থেকে দুধটা আলাদা করে পান করতে পারে। অবিদ্যা থেকে যেমন বিদ্যাকে ছেঁকে নেওয়াই আসল শিক্ষার কাজ। কখনও আবার ময়ূর তাঁর বাহন। এর অর্থ এই যে ময়ূর অহঙ্কারী, নিজের রূপের মোহে নিজেই আবিষ্ট। তাকে বাহন করে সরস্বতী শিক্ষা দেন: বিদ্যা তাঁর রূপের চেয়ে মূল্যবান। যেহেতু সরস্বতী বিদ্যার দেবী তাই সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই এ উৎসব অনেক বড় করে পালিত হয়। আর সেখানে দল বেঁধে অঞ্জলি দেই আমরা শিক্ষার্থীরা। মানুষের ভেতরের পশুকে নিবৃত্ত করে জ্ঞান দান করেন বিদ্যার দেবী সরস্বতী।
রাজশাহী মহানগরের বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্যপরিষদের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল কুমার ঘোষ বলেন, মা সরস্বতীর পূজা উপলক্ষ্যে সুন্দরভাবে আয়োজন
করা হয়েছে। সকালে পূজা আর্চনা হবে। পূজা শেষে ভক্তরা অঞ্জলী প্রদান করবেন। তারপর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে। তবে সব স্বাস্থ্যবিধি মেনেই করা হবে। প্রতিটা মন্ডপে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও মাস্ক থাকবে। এছাড়া আলোকসজ্জা সীমিত পর্যায়ে করা হয়েছে। সব কিছু আমরা নিয়ন্ত্রণে রেখে এগিয়ে যাচ্ছি। পূজার পরের দিন ঘাটে প্রতিমা বিসর্জন করা হবে। প্রশাসন আমাদেরকে যথেষ্ট সাহায্য করছেন। রাজশাহী সিটি করপোরেশনে প্রায় ১ লক্ষের বেশি মানুষ এই পূজা করে থাকেন। জ্ঞান, বিদ্যা, সুরের ও সৃজনশীলতা বিকশিত হওয়ার মূল মন্ত্র মা সরস্বতী।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।